

বৃহস্পতিবার ● ২১ অক্টোবর ২০২১
প্রথম পাতা » সম্পাদকীয় » শাসকদের সাম্প্রদায়িক ভেদ বিভাজন আর সহিংসতার অপরাজনীতি শেষ পর্যন্ত পরাজিত হবে
শাসকদের সাম্প্রদায়িক ভেদ বিভাজন আর সহিংসতার অপরাজনীতি শেষ পর্যন্ত পরাজিত হবে
শারদীয় দুর্গোৎসব কেন্দ্র করে যে ধর্মীয় উসকানি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তা দেশবাসীকে ক্ষুব্ধ করেছে।এসব ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের জন্য চরম লজ্জা, অপমান ও গভীর উৎকন্ঠার। এসব ঘটনা প্রবাহে আমরা হতবিহ্বল, মর্মাহত।অশুভশক্তির তান্ডবলীলায় আমরা অনিরাপদ ও পরাজয়ের গ্লানি অনুভব করছি।দীর্ঘ গগণতান্ত্রিক সংগ্রাম আর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে নতুন রাষ্ট্রের দিশা হিসাবে আমরা সাম্য,মানবিক মর্যাদা আর সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার যে অংগিকার ব্যক্ত করেছিলাম তা আর কলংক নিয়ে ভূলুণ্ঠিত।
এটা স্পষ্ট যে , ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে এসব সাম্প্রদায়িক উসকানি ও সহিংসতা সংঘটিত হয়েছে। অতীতে সংঘটিত অধিকাংশ সাম্প্রদায়িক হামলা - আক্রমণের মত এবারকার এসব হামলা আক্রমণ ও সহিংসতার পিছনেও যে রাজনৈতিক ইন্ধন ও দুরভিসন্ধি রয়েছে তাও পরিস্কার হয়ে উঠছে।এসব যতটা না সাম্প্রদায়িক ঘটনা তার চেয়ে বেশী হচ্ছে ধর্মের ছদ্দাবরণে রাজনৈতিক ঘটনা। নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত হলে হয়তো প্রকৃত বিষয় দেশব্যাপী জানতে পারত।বরাবরের মত এবারও সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে।
কারণ ইতিমধ্যে দোষারপের যে রাজনীতি শুরু হয়েছে এবং এসব ঘটনা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা নেবার যে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে তাতে এই আশংকা বাড়ছে।হাজীগঞ্জ, চৌমুহনী ও পীরগঞ্জের ঘটনা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের তান্ডবকেই কেবল মনে করিয়ে দেয়।মন্দির ও জ্বালিয়ে দেয়া বসতি পুনস্থাপিত হবে,কিন্তু যে অবিশ্বাস, অনাস্থা আর গভীর ক্ষত তৈরী হয়েছে তার নিরসন হওয়া কঠিন।
এই সমগ্র পরিস্থিতির দায়দায়িত্ব অবশ্যই সরকার ও সরকারি প্রশাসনের। তারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি।অকুস্থলে বরং তাদের নিষ্ক্রিয়তা পরোক্ষভাবে হামলাকারীদেরকে উৎসাহ যুগিয়েছে।
এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে গত কয়েক দশক ধরে।সরকারি দলসহ শাসকশ্রেণীর দলসমূহ এখন ধর্মাশ্রয়ী দলে পরিনত হয়েছে, ধর্মকে তারা তাদের রাজনীতির উপজীব্যে পরিনত করেছে; সাম্প্রদায়িক মতাদর্শ ও রাজনীতির রাস্তাও বড় হয়েছে। এই অবস্থাকে কাজে লাগাচ্ছে দেশী বিদেশি নানা প্রতিক্রিয়াশীল, ধর্মান্ধ ও ফ্যাসিবাদী শক্তি।সরকার ও শাসকগোষ্ঠী যখন নানা দিক থেকে কোনঠাসা ও বিপদে থাকে তখন তারা নিজেদের গদি রক্ষার প্রয়োজনে সাম্প্রদায়িকতার উপর ভর করে।এখনকার অভিজ্ঞতাও এরই সাক্ষ্য দিচ্ছে।কিন্তু এটা এক আত্মঘাতী রাজনৈতিক কৌশল।এই নীতিহীন কৌশলে বিপদে পড়ে সমগ্র দেশ ও তাদের জনগণ। এই ধরনের ভয়ানক কৌশল সম্পর্কে দেশবাসী সচেতন না হলে সামনে আরও বিপদ।
দেশের মানুষের জীবন এখন ওষ্ঠাগত, তাদের ভাতের অধিকার - ভোটের অধিকার দুটাই বিপদাপন্ন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন বিরোধী সংগ্রামে জিততে হলে আবশ্যিক ভাবে সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধেও লড়তে হবে।
আমরা বিশ্বাস করি দেশের মানুষ শাসকদের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার রাজনৈতিক কৌশল প্রত্যাখ্যান করবে, শাসকদের বিভেদমূলক হিংসার রাজনীতির বিরুদ্ধে গণসংগ্রাম -গণপ্রতিরোধ জোরদার করবে।আমাদের এই মিলিত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে আস্থা বিশ্বাস ভ্রাতৃত্বের মেলবন্ধন আরও জোরদার করতে পারব।তার লক্ষ্মণও বেশ স্পষ্ট। আমাদের জনগণ, ধর্মপ্রাণ মানুষেরা দেশব্যাপী ইতিমধ্যে এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে রাজপথে অবস্থান নিয়েছে।তাদের প্রকৃত ধার্মিকতা তাদের মধ্যে মানবিক সহনশীলতা বাড়িয়ে তুলছে,নিজ ধর্মের মর্যাদা রক্ষার পাশাপাশি অন্য ধর্মের মর্যাদা রক্ষার ব্যাপারেও আমাদের জনগণ তুলনামূলকভাবে অনেক দায়িত্বশীল। ভরসার যায়গাটা এখানে। আমরা নিশ্চিত শাসকদের ভেদ বিভাজনের রাজনীতি আর সাম্প্রদায়িক কূপমন্ডুক শক্তির অপতৎপরতা আমাদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে।বৈচিত্রের মধ্যে আমাদের যে ঐক্য ও যুথবদ্ধতা তাকে আরও বিকশিত করবে।শেষ পর্যন্ত আমাদের দেশ ও জনগণ বিজয়ী হবে।