শিরোনাম:
●   ক্ষমতার পিছনে জনসম্মতি না থাকলে তা ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে পারে ●   রাঙামাটিতে আবু বক্কর সিদ্দিক এর বিরোদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে জনসাধারণ ●   প্রয়াত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এপোলো জামালীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ●   বিজয়ানন্দ থেরো’র ৪১তম জন্মদিন উদযাপন ●   দেশের নিরাপত্তার সাথে যুক্ত প্রধান সমুদ্র বন্দর বিদেশী কোম্পানির তত্বাবধানে দেয়ার তৎপরতা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী ●   রাঙামাটিতে বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন ●   প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ চলে যাওয়ার দায়দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারকেই বহন করতে হবে ●   গণঅভ্যুত্থানের অর্জন ধরে রাখতে যুবসমাজকে রাজপথে জেগে থাকতে হবে ●   ভারত - পাকিস্তানের মধ্যকার এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কেউই বিজয়ী হবেনা ●   মৌলবাদীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে নারী প্রতিকৃতিতে জুতা মেরে বস্ত্র হরণ করে সমগ্র নারী সমাজকে অসম্মান করেছে : জুঁই চাকমা
ঢাকা, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জনগণতন্ত্র-jonogonotontro/The Peoples Democracy
মঙ্গলবার ● ৮ ডিসেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » বেগম রোকেয়া-এখনও নারী শক্তি ও নারী জাগরণের আলোকবর্তিকা : বহ্নিশিখা জামালী
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » বেগম রোকেয়া-এখনও নারী শক্তি ও নারী জাগরণের আলোকবর্তিকা : বহ্নিশিখা জামালী
৯৮১ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ৮ ডিসেম্বর ২০২০
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বেগম রোকেয়া-এখনও নারী শক্তি ও নারী জাগরণের আলোকবর্তিকা : বহ্নিশিখা জামালী

---৯ ডিসেম্বর আমাদের এ অঞ্চলে নারী শিক্ষা ও নারী জাগারণের অগ্রদূত মহিয়সী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্মদিন। তিনি বাংলা ভাষাভাষী আমাদের এই অঞ্চলে নারী আন্দোলনেরও পথিকৃৎ। আমাদের এ অঞ্চলের পশ্চাৎপদ আর্থসামাজিক প্রেক্ষিতে বেগম রোকেয়ার জন্ম, চিন্তা ও কাজ রিতিমত বিষ্ময়কর। রোকেয়া তার সময়কালে পারিবারিক, সামাজিক ও সংস্কৃতিক নানা বাধা ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে যেভাবে নারী শিক্ষার আলো জালিয়েছেন, যাবতীয় পশ্চাৎপদতা ও কুপমন্ডকতাকে পায়ে দলে নারীর অধিকার ও মর্যাদার কথা বলেছেন, সমগ্র নারী জাতিকে তাদের অধিকার ও মুক্তির লক্ষ্যে জাগিয়ে তুলতে প্রণোদনা যুগিয়েছেন বাংলায় তার কোন দ্বিতীয় নজির নেই। নারী সংক্রান্ত প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বিরুদ্ধে তিনি যেমন চাবুক হেনেছেন তেমনি নারীদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় তাদের চোখে স্বপ্ন জাগিয়ে তুলেনে।

বেগম রোকেয়া বাল্য বিবাহ, যৌতুক প্রথা, তালাকসহ নারী বিরোধী বিভিন্ন সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে লেখনি ধারন করেছেন। তিনি কথা বলেছেন, লড়াই করেছেন, তাঁর শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করেছেন। ধর্মান্ধতা ও নারীবিদ্বেষী নানা বয়ানের বিরুদ্ধে তিনি সারাজীবন আপোষহীন লড়াই করেছেন। নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ হিসেবে দেখা ও ভোগ্যপণ্য হিসেবে বিবেচনা করা সামাজিক ও ধর্মীয় অপব্যাখ্যার বিরুদ্ধে তিনি অসাধারণ যুক্তিতর্ক, উপমা ও হাস্যরসের মধ্য দিয়ে নারীবিদ্বেষী পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবকে উন্মোচন করেছেন। তিনি পুরুষের মত নারীও যে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ এবং শিক্ষা ও সুযোগ পেলে নারীরাও যে সমস্ত দিক থেকে পুরুষের সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারে অসাধারণ দক্ষতায় তা তিনি তুলে ধরেছেন।

বেগম রোকেয়া তাঁর সমগ্র রচনাশৈলীর মধ্য দিয়ে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে নারী অধিকার ও নারী মুক্তির যে বার্তা দিয়েছেন তা আজও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। পিতৃতন্ত্রের ছাঁচে গড়ে ওঠা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নিগড় থেকে বেরিয়ে আসার ব্যাপারে তিনি বলিষ্টভাবে লিখেছেন “পুরুষের সমকক্ষতা লাভের জন্যে আমাদের যাহা করিতে হয় তাহাই করিব”, “যে পরিশ্রম আমরা স্বামীর গৃহকার্যে ব্যয় করি সেই পরিশ্রম আমরা অন্যকাজে ব্যয় করিতে পারিনা কেন?”।

১৯০৪ সালে রোকেয়া তার মতিচুর গ্রন্থে লিখেছিলেন, “আমরা সমাজেরই অর্ধ অঙ্গ। আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কি করে?” পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যে মূলত: একটি বিকলাঙ্গ সমাজ তার এই উপলব্ধির গভীরতা ছিল অনেক। সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কোন সমাজ ও রাষ্ট্র যে এগিয়ে যেতে পারেনা তার এ উপলব্ধি ছিল স্পষ্ট। রোকেয়ার এই শিক্ষা ও সামাজিক চৈতন্যের পথ ধরেই গত একশত বছরে আমাদের পথ চলা; তিনি যে আলো জ্বালিয়েছেন সেই আলোই এখন বিস্তৃত হয়ে আমাদের পথের দিশা দিয়ে চলেছে।

আমাদের এ দেশে বিশেষ করে ১৯৪৭ এর পর নারী শিক্ষা ও নারী আন্দোলনে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তাদের প্রেরণাদাত্রী ছিলেন বেগম রোকেয়া। দেশ ভাগের পর পূর্ববঙ্গের মুসলিম নারী জাগরণের মধ্যমনিও ছিলেন বেগম রোকেয়া। পাকিস্তানি জমানার ২৩ বছর এবং বাংলাদেশ উত্তর গত ৫০ বছরেও বেগম রোকেয়া এখনো সবচেয়ে বড় আলোকবর্তিকা হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছেন। বেগম রোকেয়া তাঁর সময়ে যে সাহসী উচ্চারণ করেছেন তা এখনও আমাদের কাছে বিষ্ময়ের উদ্রেক করে। নারীদেরকে উদ্দেশ্যে করে তিনি লিখেছিলেন “আমরা অকর্মন্য পুতুল জীবন বহন করিবার জন্য সৃষ্টি হই নাই। বর দুর্লভ হইয়াছে বলিয়া কন্যাদায়ে কাঁদিয়া মরি কেন? কন্যাগুলোকে সুশিক্ষিত করিয়া কার্যক্ষেত্রে ছাড়িয়া দাও, নিজের অন্ন বস্ত্র উপার্জন করুক” (স্ত্রী জাতির অবনতি)।

আমাদের বিদ্যমান সমাজ ও রাষ্ট্র দাসত্বের শৃংখল থেকে নারীকে কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে দেয়না। রোকেয়া বলেছেন- “যখন কোন ভগিনি মাথা তুলিয়া মস্তক উত্তোলনের চেষ্টা করিয়াছেন তখনই ধর্মের দোহাই বা শাস্ত্রের বচনরূপ অস্ত্রঘাতে তাহার মস্তক চূর্ণ হইয়াছে (স্ত্রী জাতির অবনতি)। এখনো ধর্মীয় এই অপব্যাখ্যা ও অনাচারের উত্তরাধীকার আমাদের নারীদেরকে বহন করে যেতে হচ্ছে। তাঁর শেষ আহবান “জাগো জাগো গো ভগিনি”।

গত এক শতাব্দীতে রোকেয়ার এ আহবান ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারের মধ্যে। এই সাহসী আহবানে উজ্জীবিত হয়ে এদেশের নারী ও নারী আন্দোলন তার অদম্য যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। আমাদের ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপর গত পাঁচ দশকের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অভিযাত্রায় নারীদের যে অগ্রগতি সেক্ষেত্রে রোকেয়া এখনো আদর্শিক আইকন হিসেবে কাজ করছেন। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও আজ নারীর যে ভূমিকা তাও রোকেয়ার নারী শক্তি, নারী স্বাধীনতা ও নারীর জাগরণের পথ ধরেই।

গত এক শতাব্দীতে এদেশের নারীরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ও সাফল্য দেখাতে পারলেও নারী এখনো পুরুষতান্ত্রিকতার নিগড়ে বাঁধা। পাশাপাশি রয়েছে উৎকট শ্রেণী শোষণ। এরমধ্যে ধর্মীয় কুপ মন্ডুকতা আবার সমাজের মধ্যে নানা ভাবে জেঁকে বসেছে। নারী আবার নানা দিক থেকে আক্রমণ, নিগ্রহ, নিপীড়ন ও লাঞ্ছনার শিকার। এই অবস্থায় বেগম রোকেয়ার শিক্ষা, চিন্তা, দর্শন ও সংগ্রাম আবারও নতুন তাৎপর্য নিয়ে হাজির হয়েছে। রোকেয়ার অনুস্মরণীয় পথ ধরে এগোতে পারলেই নারী তার অধিকার ও মুক্তি অর্জনে সাফল্য দেখাতে সক্ষম হবে।
জয়তু বেগম রোকেয়া।

বহ্নিশিখা জামালী
রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটি
সভাপতি
শ্রমজীবী নারী মৈত্রী।





উপ সম্পাদকীয় এর আরও খবর

শান্তি চুক্তি পাহাড়ে বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ শান্তি চুক্তি পাহাড়ে বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ
পার্বত্য চুক্তির ২৬ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ কি-কি বৈষম্যের স্বীকার তা নিয়ে একটি পর্যালোচনা পার্বত্য চুক্তির ২৬ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ কি-কি বৈষম্যের স্বীকার তা নিয়ে একটি পর্যালোচনা
পার্বত্য অঞ্চলের ক্রীড়া উন্নয়নের নৈপথ্যের নায়ক নির্মল বড়ুয়া মিলন পার্বত্য অঞ্চলের ক্রীড়া উন্নয়নের নৈপথ্যের নায়ক নির্মল বড়ুয়া মিলন
সবকিছু কেড়ে নিয়েছে স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার আওয়ামীলীগ সবকিছু কেড়ে নিয়েছে স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার আওয়ামীলীগ
রাঙামাটিতে ঐক্যবদ্ধ বড়ুয়া সমাজ গড়ে তোলার সম্ভবনার পথ দেখা দিয়েছে রাঙামাটিতে ঐক্যবদ্ধ বড়ুয়া সমাজ গড়ে তোলার সম্ভবনার পথ দেখা দিয়েছে
আগামীতে  কারা দেশ চালাবে ? আগামীতে কারা দেশ চালাবে ?
মহান মে দিবস ও  শ্রমিকশ্রেণীর মুক্তির সংগ্রাম মহান মে দিবস ও শ্রমিকশ্রেণীর মুক্তির সংগ্রাম
সীমান্ত হত্যাকাণ্ড ও বাংলাদেশ - ভারত সম্পর্ক সীমান্ত হত্যাকাণ্ড ও বাংলাদেশ - ভারত সম্পর্ক
বিপন্ন সভ্যতায় বিপন্ন নারী বিপন্ন সভ্যতায় বিপন্ন নারী
গণতান্ত্রিক ও মানবিক সমঅধিকার  ছাড়া  নারীর মুক্তি নেই : বহ্নিশিখা জামালী গণতান্ত্রিক ও মানবিক সমঅধিকার ছাড়া নারীর মুক্তি নেই : বহ্নিশিখা জামালী

আর্কাইভ