

মঙ্গলবার ● ২৭ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » ছবিঘর » সরকারের দশমাসেও দেশ স্থিতিশীল হয়নি ; বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের ব্যাপারে মানুষ আশ্বস্ত হতে পারছেনা
সরকারের দশমাসেও দেশ স্থিতিশীল হয়নি ; বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের ব্যাপারে মানুষ আশ্বস্ত হতে পারছেনা
আজ ২৭ মে-২০২৫ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদ আয়োজিত ” অন্তর্বর্তী সরকারের দশমাস- গণতন্ত্র ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন” শীর্ষক আলোচনা সভায় জাতীয় নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশ এখনো একটা বহুমাত্রিক সংকট কাল অতিক্রম করছে। দশমাস পরেও দেশে একটা স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমরা দেখা যাচ্ছে না।
তারা বলেন, গণতন্ত্রের দাবি নিয়ে যে গণঅভ্যুত্থান দশমাস পরেও বলা যাচ্ছেনা গণতন্ত্রের পথটা সত্যি সত্যি নির্বিগ্ন হলো কিনা। এখনও দেশের মানুষ অবাধ নিরপেক্ষ বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে আশ্বস্ত হতে পারছেনা। বিগত ১৬ বছর ধরে মানুষ যে নির্বাচনের অপেক্ষা করছে, সেই নির্বাচন কবে কখন অনুষ্ঠিত হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা ও আত্মবিশ্বাসের অভাবই এর বড় কারণ।তারা অনতিবিলম্বে বিচার ও সংস্কারের প্রক্রিয়ায় নির্বাচন ও দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের সুনির্দিষ্ট পথনকশা দাবি করেন।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান, সোনার বাংলা পার্টির সভাপতি সৈয়দ হারুন রশীদ, সাংবাদিক - লেখক অনিন্দ্য আরিফ।
আলোচনা সভা পরিচালনা করেন সংগঠের সদস্যসচিব বাবর চৌধুরী।
আলোচনা সভায় আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন ছাত্র জনতা, রাজনৈতিক দল ও সশস্ত্র বাহিনীর সমর্থনে সরকার গঠিত হলেও এখন তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছেনা।এই সরকারের মধ্যে পুরানা আমলের মত স্বৈরাচারী প্রবনতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। অনেক রকম বিভক্তি বিভাজনও দেখা যাচ্ছে। এর দায়তো অনেকখানি সরকারকেই নিতে হবে।
তিনি বলেন, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের ব্যাপারে সবাই একমত। তাহলে সমস্যা কোথায়! ঐক্যমতের জায়গাগুলোতে কেন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না?তিনি দ্রুত নির্বাচনের রোড়ম্যাপ ঘোষণা করার দাবি জানান।।
সাইফুল হক বলেন, সরকার পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকার কারণে সরকার বিতর্কিত হয়ে পড়েছে।মানুষ মনে করছে সরকার একদিকে দূর্বল আর অন্যদিকে অকার্যকরী। প্রজ্ঞা ও দূরদর্শীতার অভাবে সব যায়গায় হাত দিতে যেয়ে সরকার পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। দেশের নিরাপত্তা ঝুঁকিও ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। তিনি বলেন, সরকার একযাত্রায় সবকিছু অর্জন করতে চান।কিন্তু তা বাস্তব নয়।
তিনি বলেন, দশমাস পরেও সরকারের অন্তরের কথা ভালভাবে বোঝা যাচ্ছেনা। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে মতবিনিময়ের পর সরকারের উচিৎ অনতিবিলম্বে রাজনৈতিক দল ও জনগণকে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের ব্যাপারে আশ্বস্ত করা।
শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন মানুষ এখনো পর্যন্ত স্বাধীনভাবে কথা বলতে দ্বিধা করছে, উদ্বেগ আছে মব সন্ত্রাস নিয়ে। গণমাধ্যম আবার নতুন করে চাপের মধ্যে আছে। এরকম হওয়ার কথা নয়।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে বিদায় দিলেও নতুন এক ফ্যাসিবাদী চিন্তা, নতুন এক ফ্যাসিবাদী ধারণা নানা ধরনের রাজনৈতিক তৎপরতা এক ধরনের জবরদস্তি করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, সরকারের কাজকর্ম মানুষকে হতাশ করছে, ক্ষুব্ধ করছে । কিন্তু তারপরও আমরা আশাবাদী হতে চাই। বিদ্যমান সংকট থেকে কিভাবে বের হওয়া যায় সবাই মিলে সেই উদ্যোগ নেয়া দরকার।
রাশেদ খান বলেন গণহত্যার বিচারে যেমন আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ , বিচারটা যেমন চলবে পাশাপাশি আমরা সংস্কারের যে তৎপরতা আছে তাকেও জোরদার করতে চাই। দরকার জাতীয় সমাঝোতা।
মোহন রায়হান বলেন, দশমাসেই দুঃখজনকভাবে সরকার বিতর্কিত হয়ে যাচ্ছেন তাদের পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকার জন্য । তারাবিতর্কিত হলে সংস্কার ও কাজও কিন্তু নানা ধরনের বাধা সম্মুখীন হবে, সরকারের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।
সভাপতির বক্তব্যে শেখ আবদুর নূর বলেন, দেখা যাচ্ছে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে অপ্রয়োজনীয় একটা দূরত্বের জায়গা দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। সেই অপ্রয়োজনীয় দূরত্বের জায়গাটা যাতে না থাকে সেটা আমরা দেখতে চাই । তিনি ব’লেন, নানা প্রশ্নে ভিন্নমত থাকবে দ্বিমত থাকবে, তবে শেষ পর্যন্ত আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব জাতীয় নিরাপত্তা, ভোট অধিকার, গণতন্ত্র, বিচার সংস্কারের ব্যাপারে আমাদের মধ্যে আবার বড় দাগের বোঝাপড়া থাকবে ।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদ এই বোঝাপড়ার জায়গাটা বাড়িয়ে তুলতে চায়। আমরা রাজনৈতিক দলের ভয়েজ এর পাশাপাশি নাগরিক সমাজের ভয়েস গুলো আমরা সামনে আনতে চাই।