রবিবার ● ২৫ জুলাই ২০২১
প্রথম পাতা » ছবিঘর » জননেতা সাইফুল হক এর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে একান্ত সাক্ষাৎকার
জননেতা সাইফুল হক এর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে একান্ত সাক্ষাৎকার
বিদেশে বাংলা পত্রিকা ও অনলাইন মিডিয়ার জন্য বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক জননেতা সাইফুল হক তাঁর রাজনৈতিক জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অজানা তথ্য এই সাক্ষাৎকারে প্রকাশ করেছেন। ২৬ জুলাই তাঁর জন্মদিন। এই উপলক্ষে আমাদের পাঠকদের জন্য এই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হল।
আপনি রাজনীতিতে কবে আসেন ? কিভাবে ?
এর পেছনে কার অনুপ্রেরণা ছিল ?
স্কুলে পড়া অবস্থায় ১৯৬৭ সালে আমি রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলে যাওয়া শুরু করি। ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানের ঢেউয়ে নিজে আরো বেশী করে রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে পড়ি। ১৯৭০ সালে খুলনা ল্যাবরেটরী স্কুলে পড়ার সময় সিনিয়র ভাইদের সংস্পর্শে এসে আমি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এম-এল) সাথে যুক্ত হই। রাজনীতিতে আসার পিছনে একেবারে শুরুতে আমার বাবার পরোক্ষ প্রভাব কাজ করেছে।
২। জীবনে কোন কোন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে আপনার সাক্ষাৎ হয় ?
দেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রবীন শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহা, কমরেড মনি সিংহ, কমরেড শরদিন্দু দস্তিদার, কমরেড শান্তি সেন, কমরেড বারীন দত্ত, কমরেড ননী দত্ত, কমরেড অমল সেন, কমরেড আবুল বাসার, কমরেড দেবেন সিকদার, ভাষা সংগ্রামী কমরেড আব্দুল মতিন, কমরেড আলাউদ্দীনসহ শীর্ষস্থানীয় অনেকের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে। এদের অনেকের সাথে আমার রাজনৈতিক কাজ করারও সুযোগ হয়েছিল।
জাতীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে ১৯৭০ এ খুলনায় শেখ মুজিবুর রহমানকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া, বিচারপতি সাহাবউদ্দীন আহমেদসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতৃবৃন্দের সাথেই আমার সাক্ষাৎ হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারতে কমরেড জ্যোতি বসু, কমরেড হরেকিষান সিং সুরজিৎ, আজাদ হিন্দ ফৌজ এর নেত্রী ক্যাপ্টেন লক্ষী সাইগল, লেখিকা অরুন্ধুতি রয়, নেপালের প্রথম কমিউনিস্ট প্রধানমন্ত্রী মনোমোহন অধিকারী, কমরেড মাধব নেপাল, কমরেড কেপি শর্মা ওলি, কমরেড প্রচন্ড, ফিলিপাইনের প্রফেসর হোসে মারিয়া শিসন, বিখ্যাত ‘ফানসেন’ গ্রন্থের লেখক উইলিয়াম হিন্টন, দুনিয়ার অনেক বিশিষ্ট রাজনীতিক, লেখক, নাগরিক আন্দোলনের নেতার সাথে আমার সাক্ষাৎ, একসাথে থাকা, দীর্ঘ আলাপচারিতার সুযোগ হয়েছে।
দেশে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে কমরেড নির্মল সেন ব্যাতীত আর কেউই আমাকে তুমি বলে সম্বোধন করেননি। অনেককে আমি তুমি বলতে অনুরোধ করলেও কাজ হয়নি।
এদের অনেকের সাথে আমার রয়েছে অসাধারণ সব স্মৃতি। সিপিআই (এম) এর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক কমরেড হরেকিসান সিং সুরজিৎ এর অসাধারণ আন্তরিকতা আর অভ্যর্থনায় আমাকে মুগ্ধ করেছিলেন।
৩। যার হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন তার সাথে কিভাবে পরিচয় হয় ?
তাদের সাথে তিন/চারটি স্মরণীয় ঘটনা বলুন।
ক.আমি বিশেষ কোন ব্যক্তি বা ভাই এর হাত ধরে রাজনীতিতে আসিনি। তবে খুলনা ল্যাবরেটরী স্কুলের বড় ভাই ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মোকতার আলী ও হাফিজুর রহমানের ভূমিকা রয়েছে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এম-এল) এর সাথে আমার সংযুক্তির ক্ষেত্রে। আর খুলনার দৌলতপুরের কমরেড খোকনেরও একটি ভূমিকা রয়েছে আমার কাছে বামপন্থী সাহিত্য ও বইপত্র পৌছানোর ক্ষেত্রে।
খ.আমার জীবনের প্রথম বামপন্থী বই কমরেড মাও জে দং এর লেখা ‘হুনানের কৃষক আন্দোলনের তদন্তের ইতিহাস’। ১৯৭০ এ বইটি সৈয়দ মোকতার আলী আমাকে দিয়েছিলেন গোপনে পড়ার জন্য। এটা একটা ইতিহাস বটে!
গ.১৯৭০ এ স্কুলের অনিয়ম-দুর্নীতি আর খুলনার ডুমুরিয়ার কৃষক আন্দোলনের পক্ষে স্কুলে দেয়াল লিখনের সময় স্কুলের প্রহরী ও পিয়নদের হাতে আমি আর হাফিজ ধরা পড়ি। আমাদেরকে নক্সাল হিসাবে আখ্যা দিয়ে স্কুল হোস্টেলে আটক রাখা হয়। এর প্রতিবাদে সকাল থেকে স্কুল উত্তাল। পরে ছাত্র বিক্ষোভের মুখে কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে মুক্ত করে দিতে বাধ্য হয়। দুপুরে স্কুলের অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত এক যৌথ সমাবেশে আমি জীবনের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা করি। প্রায় রাতারাতি আইকন বনে গেলাম।
ঘ. ১৯৬৯-৭০ এ দৌলতপুর-খালিশপুর-খুলনা অঞ্চলে জুট বেল প্রেস শ্রমিক ও পাটকল শ্রমিকদের বিশাল বিশাল মিছিলে যুক্ত হতাম। সেই আবেগ আর উত্তেজনার কোন তুলনা নেই। এইসব মিছিল থেকেই আমার স্লোগান দেয়া শুরু। আজ ৫০/৫২ বছর পরও যে ছন্দ মিলিয়ে স্লোগান দিতে পারি তার শুরু ‘৬৯ সাল থেকে’।
ঙ.’৬৯ এর গণআন্দোলনের সময় এক ছাত্র ধর্মঘটে যোগ দিতে ছুটি শেষে গ্রাম থেকে খুলনা শহরে ফিরছিলাম। প্রবল বৃষ্টি আর ঝড়ে আমি রূপসা ঘাটে বসেছিলাম। প্রবল স্রোত আর বাতাসের কারণে কোন নৌকাই যাত্রী পারাপার করছিল না, দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে গেল। পরে খুব মন খারাপ করে কাদা আর প্যাক ভেঙ্গে লকপুরে গ্রামের বাড়ী ফিরে এলাম।
চ.আর একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। গ্রামে খাজুরা প্রাইমারী স্কুলে আমি তখন ক্লাস ফোরে পড়ি। বাড়ীতে তখন ফিলিপস রেডিও এল। ভিয়েতনামে তখন মার্কিনীদের সাথে ভিয়েতকংদের প্রবল যুদ্ধ চলছে। মার্কিনীরা যথেচ্ছ নাপাম বোমা ফেলছে। কিন্তু ভিয়েতনামীরা অদম্য।রেডিওতে যুদ্ধের খবর শোনার জন্য প্রায় টিফিনের ছুটির পর আমি বাড়ী চলে আসতাম। রেডিও আবার থাকতো সিন্দুকে আটকানো। কত বুদ্ধি করে এই সিন্দুক খুলে যুদ্ধের খবর শুনতাম। কোনদিন স্কুলে ফিরে যেতাম, কোনদিন ফেরা হতো না। এক একদিন স্কুলে এক এক কারণ দেখাতাম। পরে বাড়ীতে একটা রফা হোল যে সন্ধ্যার পর সবাই মিলে খবর শোনা হবে।
ছ. বাবা তখন খুলনার দৌলতপুরে রেলিগেটে ডাক্তারী প্রাকটিস করতেন। তিনি নিয়মিত পাকিস্তান অবজারভার রাখতেন। খুলনায় যে’কজন নিয়মিত রিড়ার্স ডাইজেস্ট পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন বাবা তার অন্যতম। সপ্তাহান্তে গ্রামের বাড়ী ফিরলে বাবা অবজারভারসহ পত্রিকাগুলো নিয়ে আসতেন। আমি তখনও ইংরেজী ভাল পড়তে পারতাম না। ছবিগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতাম। চেষ্টা করতাম ক্যাপশনগুলো পড়ার। বাবামাঝে মাঝে সাহায্য করতেন। কিছু কিছু পড়েও শোনাতেন। রিডার্স ডাইজেস্টের ইংরেজী জোকসগুলো বাংলায় অনুবাদ করে আমাকে মজা দেবার চেষ্টা করতেন।জীবনের এ এক অসাধারণ সময়।
ইত্তেফাক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার মৃত্যুর খবর বাবা অবজারভার পত্রিকাতেই পেলেন। বাবার খুব মন খারাপ হয়ে গেল। আমাকে বললেন ‘জানো আব্বু আমাদের বাঙ্গালীদের বড় ক্ষতি হয়ে গেল’। এই বেদনা বাবার অনেকদিন ছিল।
৪। মুক্তিযুদ্ধের কয়েকটি স্মরণীয় ঘটনার কথা বলুন
ক. ১৯৭১ এর মে-জুন মাসে পাকিস্তানী সেনাদের সম্ভাব্য হামলা-আক্রমন থেকে বাঁচতে বাগেরহাটের ফকিরহাট থানায় লকপুরে বিভিন্ন বাড়ীতে পাকিস্তানী পতাকা তোলা হচ্ছে। আমাদের প্রতিবেশী এক শুভানুধ্যায়ী আমাদের বাড়ীর ছাদেও অনেক কষ্ট করে পাকিস্তানী পতাকা টাংগিয়ে গেল। বাড়ীতেই এই নিয়ে আমাদের ভাই বোনদের প্রবল ক্ষোভ আর উত্তেজনা। পরে আমরা ভাই বোনেরা মিলে সেই পতাকা খুলে ফেলেছিলাম।
খ. ১৯৭১ এ প্রায়ই আমাকে বাড়ীর বাইরে রাত কাটাতে হোত। আত্মীয়-স্বজন আর বন্ধু-বান্ধবই ছিল সহায়। তখন আকাশবাণী, বিবিসি আর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ছিল আমাদের খবরের প্রধান উৎস। রাতে যেখানেই থাকতাম দল বেধে খবর শোনা হোত। বয়স্কদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের খবরগুলো সহজ করে ব্যাখ্যা করতে হত আমাকে। আমি প্রবল উৎসাহ আর আনন্দে খবরগুলো ব্যাখ্যা করতাম। ক্রমে এলাকায় আমি মুক্তিযুদ্ধের খবরের বড় মাধ্যমে পরিণত হলাম। আগস্ট- সেপ্টেম্বরে এলাকার রাজাকারেরা আমাকে শাসিয়েও গিয়েছিল কয়েকবার। এরপর পুরো আত্মগোপনে যাওয়া ছাড়া পথ ছিল না।
গ. ১৯৭১ এর অক্টোবরে ফকিরহাট অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সরাসরি আমার যোগাযোগ স্থাপিত হল। মুক্তিযোদ্ধাদের তিন/চারটি গ্রুপের মধ্যে খবরাদি আদান-প্রদানে আমি ও আমার বন্ধুরা বড় ভূমিকা পালন করেছিলাম। নভেম্বরে যেয়ে খারাবাদ-বাইনতলা অঞ্চলে ঘাটি করা মুক্তিযোদ্ধাদের দলের সাথে আমি যুক্ত হলাম এবং তাদের সাথে ক্যাম্পে থাকতে লাগলাম। আমার কাজ ছিল কিছুটা সমন্বয়ের আর নানা উৎস থেকে খবরাদি যোগাড় করে কমান্ডারদের কাছে পৌঁছে দেয়া। সাথে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের কারও কারও ব্যক্তিগত চিঠিপত্র লিখে দেওয়া। এই ক্যাম্পের গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডার ছিলেন তেরখাদার ইলিয়াসুর রহমান টুকু। পারিবারিক কারণে তাকে আমি মামা সম্বোধন করতাম। এই দেড় মাসের স্মৃতিতে রয়েছে অনেক আনন্দ ও বেদনার মিশেল।
৫। আপনি কতবার কারাগারে গেছেন ?
এ নিয়ে কোন স্মৃতি আছে ?
থানা-হাজত মিলে বার চারেক কারাগারে গেছি। তবে প্রতিবারই তাড়াতাড়ি ছাড়া পেয়েছি। ২০১১ এর ৩ জুলাই জাতীয় সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির আহুত হরতালে ভোর ৬.১৫ মিনিটে পরিবারের তিন সদস্যসহ (বহ্নিশিখা জামালী, কন্যা অদিতিসহ) পার্টির ২২ জন পুরানা পল্টন মোড় থেকে গ্রেফতার হয়েছিলাম। আমাদেরকে পল্টন মডেল থানায় রাখা হয়েছিল। রাত ১২টার পর আমরা মুক্তি পাই। বেলা ১১টার মধ্যে আরো অনেককে গ্রেফতার করে এই থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। সবমিলে আমরা ছিলাম ৫২ জন। পুরোদিন থানা হাজতে বক্তৃতা আর আলোচনায় কেটে গেল। কষ্টের মধ্যে এটা ছিল আনন্দের। ছোট ভাই তখন ঢাকার জেলা প্রশাসক। দফায় দফায় সে তার অফিসার পাঠাচ্ছে আমাদের কন্যাকে ছাড়িয়ে নেবার জন্য। কিন্তু পুলিশের লাঠিতে কিছুটা আহত অদিতি একা মুক্ত হতে রাজী হয়নি। তার এই মনভাব আমাদেরকে মুগ্ধ করেছিল।
৬। রাজনৈতিক জীবনে বা রাজনীতিতে কোন স্মরণীয় ঘটনা আজও নাড়া দেয় ?
ক. ১৯৭৬ সালে মাও জে দং এর মৃত্যুর পর ১৯৯০ তে এরশাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর গুলিতে ডা. শামসুন আলম খান মিলন নিহত হলে এবং ২০১৮ তে আমার বন্ধু ও সহকর্মী কাজী সালাউদ্দিন মুকুল আকস্মিকভাবে মারা গেলে আক্ষরিকভাবেই আমি কেঁদেছিলাম। আবেগ সামাল দিতে পারিনি।
খ. ১৯৬৯ এর খুলনা অঞ্চলের শ্রমিক মিছিলের জঙ্গীত্ব, স্লোগান আর গতি আজও আমাকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। মনে হোত এই মিছিল যেন শেষ না হয়।
গ. ১৯৭৪ সালে খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে প্রবল বৃষ্টিতে জাসদের লক্ষ মানুষের জনসভায় আ.স.ম আব্দুর রব এর বক্তৃতা এবং জনতার ফুসে ওঠা মনোভাব আমাকে গভীরভাবে আন্দোলিত করেছিল। মনে হোত তাহলে বিপ্লবী পরিবর্তন কি আসন্ন!
ঘ. ১৯৮৩-৮৫ সালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়ীতে তৎকালীন ১৫ দলে বাংলাদেশের মজদুর পার্টির প্রতিনিধি হিসাবে বারকয়েক আমি উপস্থিত ছিলাম। শেখ হাসিনা মাঝে মধ্যে বৈঠকে উপস্থিত থাকতেন। সবার আলোচনার মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আবদুল মান্নানের আলোচনা আর কথাবার্তা আমাকে মুগ্ধ করতো। তার বিশ্লেষণ, যুক্তি ও সমন্বয়ের কথাবার্তা আমি মনোযোগ দিয়ে শুনতাম। আর সাম্যবাদী দলের কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহা শেখ হাসিনাকে সম্বোধনই করতেন মা, মাজননী বলে পরম মমতায়। অনেক পরে অবশ্য জেনেছি শেখ মুজিবের সাথে মোহাম্মদ তোয়াহার ঘনিষ্ঠতার কথা।
ঙ. ১৯৮৭ সালের ১০ অক্টোবর ছিল এরশাদ সামরিক স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটাতে ৮ দল, ৭ দল ও ৫ দলের সচিবালয় অবরোধ কর্মসূচি। অবরোধ-বিক্ষোভের এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা যখন সচিবালয় আক্রমন করছে, দেওয়াল ভেঙ্গে ফেলছে তখন শুরু হয় পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর মুর্হুমুহু গুলি, দুটি গুলি একেবারে আমার গা ঘেষে গেল। হাজার হাজার জনতার-চিৎকার। আমরা প্রথমদিকে জনতাকে সংগঠিত করার চেষ্টা করলাম। ততক্ষণে নূর হোসেনসহ অনেকেই গুলিবিদ্ধ, রক্তাক্ত। আমাদের ছাত্রকর্মীরা নূর হোসেনকে রিক্সায় তুলে মেডিকেলে নিয়ে গেল। একপর্যায়ে আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হঠতে শুরু করলাম। প্রবীণ নেতা কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহা একেবারে একা হয়ে গেলেন। তাকে হাতে ধরে স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে একেবারে মতিঝিলে তার অফিসে পৌছে দিলাম। জিপিও এর সামনে যে তিনি আমার হাত ধরলেন তার অফিস অব্দি এই হাত আর টেনে নিলেন না। সচিবালয় অবরোধের এই ঘটনা আমার মনে গভীর দাগ কেটেছিল।
চ. ‘৯০ এর দশকে কমরেড অমল সেন তখন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি। একবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিতর্ক হচ্ছে পেশাদার বিপ্লবীর ধারনা নিয়ে। আমি বললাম পার্টি সদস্য হলেই তিনি পেশাদার বিপ্লবী হয়ে যান না। অমল সেন বললেন পার্টির সদস্য মাত্রই পেশাদার বিপ্লবী। কেন্দ্রীয় কমিটির কেউ কেউ অমল সেনের পক্ষে মত দিলেন। তবে অধিকাংশই আমার সাথে একমত হলেন। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দলের গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষনেতারা নির্দিষ্ট কোন মত দিলেন না। বোঝা গেল তারা আমার সাথে একমত হলেও প্রকাশ্যে সরাসরি অমল সেনের অবস্থানের বিপক্ষে মত দিতে চাইলেন না। পরে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে এই নেতারা বললেন, দাদাকে তারা বিব্রত করতে চাননি।
ছ.২০১২/ ১৩ তে সুন্দরবন রক্ষায় রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের দাবিতে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার ঢাকা - রামপাল রোড়মার্চকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রীয় সসন্ত্রাস ভুলবার নয়।মানিকগঞ্জ থেকেই তারা আমাদের উপর হামলা শুরু করে।হামলা করা হয় মাগুরায়।এখানে আমি ও আমাদের কয়েক জন আহত হলাম। ঝিনাইদহ - যশোরে আমাদের রোড়মার্চের বহরকে কোথাও থামতে দেয়া হয়নি।আমাদের আগে পিছে আইন - শৃংখলা বাহিনীর বিরাট সাজোয়া বহর।রাস্তার মোড়ে মোড়ে সরকারী দলের বিপুল সংখ্যক সশস্ত্র ক্যাডারদের পাহারা।আমাদেরকে যেন বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমি ৭১ সালেও এরকম দৃশ্য দেখিনি।মনে হোল আমরা যেন শত্রু কবলিত অঞ্চল পার হচ্ছি।খুলনা আসার পর অনুভূতি হোল আমরা যেন মুক্তাঞ্চলে এলাম।
জ. আমার রাজপথের কয়েক দশকের সংগ্রামের-লড়াইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা হচ্ছে পার্টি বা জোটের মিটিং এ যারা বেশী বেশী লড়াই সংগ্রামের কথা বলেন, বিপ্লবী কথা বলেন বাস্তবে পুলিশের মুখোমুখি হতে তারা অনেকেই ভয় পান। বিপদ দেখলে তারা আগেই সরে পড়েন। বোধ করি তখন তারা এই তত্ত্বে বিশ্বাসী হয়ে পড়েন ‘য পলায়তি, স জীবতি’ (যে পালায় সে বাঁচে)। এ অভিজ্ঞতার ফলে এসব নেতারা যখন বড় বড় কথা বলেন তখন তাদের জন্য করুনা নয়। হঠকারীভাবে জীবনের ঝুঁকি নেবার যেমন অর্থ নেই, তেমনি গণআন্দোলন-গণসংগ্রামে নেতৃত্বকে কিছুটা ঝুকি না নিলে কিভাবে কর্মী-সংগঠকেরা উদ্বুদ্ধ হবে, সাহসী হবে, তা বুঝতে পারিনা। এরকম অভিজ্ঞতা অসংখ্য।




পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠনের মূখপাত্র নির্মল বড়ুয়া মিলনের জন্মদিনে বড়ুয়া নেতৃবৃন্দের শুভেচ্ছা
মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে পরাজয়ের ঠেলে দেবার চেষ্টা চলছে
রাঙামাটিতে দৈনিক সবুজ বাংলার তৃতীয় বর্ষ উদযাপন
রাঙামাটিতে মহান বিজয় দিবসে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির শ্রদ্ধাঞ্জলী
নানাভাবে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত ধারায় ঠেলে দেবার চেষ্টা চলছে
ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ও গণভোটকে ঝুঁকিতে ফেলা যাবেনা
সিইসি-কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জুঁই চাকমা
নির্বাচনে কালো টাকা বন্ধ না হলে আগামী সংসদেও বিত্তবান আর রাজনৈতিক মাফিয়াদের আধিপত্য দেখা যাবে
রাঙামাটিতে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় র্যাব, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার বাহিনী মোতায়েন চায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
এবারের নির্বাচন নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে প্রতি ভোট কেন্দ্রে র্যাব, সেনাবাহিনী মোতায়েন করার দাবি 