শিরোনাম:
●   ক্ষমতার পিছনে জনসম্মতি না থাকলে তা ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে পারে ●   রাঙামাটিতে আবু বক্কর সিদ্দিক এর বিরোদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে জনসাধারণ ●   প্রয়াত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এপোলো জামালীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ●   বিজয়ানন্দ থেরো’র ৪১তম জন্মদিন উদযাপন ●   দেশের নিরাপত্তার সাথে যুক্ত প্রধান সমুদ্র বন্দর বিদেশী কোম্পানির তত্বাবধানে দেয়ার তৎপরতা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী ●   রাঙামাটিতে বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন ●   প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ চলে যাওয়ার দায়দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারকেই বহন করতে হবে ●   গণঅভ্যুত্থানের অর্জন ধরে রাখতে যুবসমাজকে রাজপথে জেগে থাকতে হবে ●   ভারত - পাকিস্তানের মধ্যকার এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কেউই বিজয়ী হবেনা ●   মৌলবাদীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে নারী প্রতিকৃতিতে জুতা মেরে বস্ত্র হরণ করে সমগ্র নারী সমাজকে অসম্মান করেছে : জুঁই চাকমা
ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জনগণতন্ত্র-jonogonotontro/The Peoples Democracy
সোমবার ● ৮ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » ছবিঘর » রাষ্ট্র চায়নি কল্পনা চাকমার অপহরণকারী চিহ্নিত হোক’ : জোবাইদা নাসরীন
প্রথম পাতা » ছবিঘর » রাষ্ট্র চায়নি কল্পনা চাকমার অপহরণকারী চিহ্নিত হোক’ : জোবাইদা নাসরীন
৮৮১ বার পঠিত
সোমবার ● ৮ জুন ২০২০
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

রাষ্ট্র চায়নি কল্পনা চাকমার অপহরণকারী চিহ্নিত হোক’ : জোবাইদা নাসরীন

---জোবাইদা নাসরীন পেশায় শিক্ষক। পড়াচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে। নিবন্ধকার হিসেবেও তিনি পরিচিত। তাঁর লেখার প্রধান বিষয় আদিবাসী জীবন ও নারী। তাঁর একাধিক প্রবন্ধ দেশ-বিদেশের জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলোতে উঠে এসেছে নিন্মবর্গের মানুষের জীবন ও ইতিহাস। রাজনীতি সচেতন জোবাইদা নাসরীন এই সাক্ষাৎকারে মূলত কথা বলেছেন আদিবাসী নারী নেত্রী কল্পনা চাকমার অপহরণ, পাহাড়ে রাজনীতি, আদিবাসীদের ভবিষ্যত ইত্যাদি বিষয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্বরলিপি।
স্বরলিপি: ‘কল্পনা চাকমা বলে কেউ ছিল না!’ এই শিরোনামে সম্প্রতি আপনি একটি নিবন্ধ লিখেছেন। কল্পনা চাকমা অপহরণের শিকার হয়েছেন ১৯৯৬ সালের ১২ জুন। বহুদিন পর আপনি বিস্মৃতপ্রায় কল্পনা চাকমাকে মনে করিয়ে দিলেন।
জোবাইদা নাসরীন: ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক কারণে আমি বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছি। একটি কারণ-কল্পনা আমার বন্ধু ছিল। আরেকটি কারণ- কল্পনা অপহরণের মামলাটি সরকারিভাবে ডিসক্লোজ করা হয়েছে। কল্পনা চাকমা অপহরণের মামলাটি দেশজুড়ে আলোড়ন তৈরি করেছিল, যেহেতু তিনি ছিলেন অবিভক্ত হিল উইমেন ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক। কিন্তু আমি মনে করি, মামলাটি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নাড়াচাড়া কম হয়েছে। কল্পনার ভাইয়েরা এবং মা বলেছিলেন, তারা অপহরণকারীকে চিনতে পেরেছেন। মানুষের মধ্যে ফিস্‌ফাস্‌ ছিল একটি বিশেষ সংস্থার লোকেরা কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করেছে। যে কারণে বাইরে আলোচিত হলেও দেশের অভ্যন্তরে কল্পনার মামলাটি এগোয়নি। আপনারা জানেন, কল্পনার মামলাটি বিভিন্ন সময় রদবদল হয়েছে। কিন্তু মামলার অগ্রগতি হয়নি। এদিকে বারবার বলা হয়েছে, কল্পনার ভাইয়েরা, মা অপহরণকারীকে চিনতে পেরেছেন, তারা গুলির শব্দ পেয়েছেন; তারা অনেক দূর কল্পনার সঙ্গে গিয়েছিলেন। অথচ বলা হচ্ছে- ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই। এখন দেখুন কল্পনা সম্পর্কে খুব একটা বাতচিত নেই। যে কারণে স্মৃতি থেকে বলছি- একটা টার্ম আছে Remember to Forgate. ভুলে যাওয়ার রাজনীতি যেটা; কোনটা আমরা মনে রাখবো বা কোনটা আমরা ভুলে যাবো, কোনটা আমাদের মনে রাখানো হবে কিংবা ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হবে- সেই রাজনীতিতে পড়েছে কল্পনা নামটি।
২ জুন ১৯৯৬ সালে অপহ্নত কল্পনা চাকমা

স্বরলিপি: প্রত্যক্ষদর্শী থাকা সত্ত্বেও অপহরণকারী আড়ালে থেকে গেলেন!
জোবাইদা নাসরীন: কল্পনা অপহরণের সঙ্গে একটি বাহিনী জড়িত। যেটা মানবাধিকার সংগঠনগুলো দাবি করেছে, কল্পনার ভাই এবং মা দাবি করেছেন সেই জায়গা থেকে আমার মনে হয়- এটাকে দমিয়ে রাখা হয়েছে। মামলাটি নাড়াচাড়া করতে দেয়া হয়নি বা রাষ্ট্র চায়নি যে, কল্পনার অপহরণকারী সবার সামনে চিহ্নিত হোক।
স্বরলিপি: এই মামলা কি আবার সামনে নিয়ে আসা সম্ভব?
জোবাইদা নাসরীন: পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় জনগণের রায়, গণদাবি বলে কথা আছে, ছিল। গণমানুষ যদি এই বিষয়টি নিয়ে মুভ করে, যদি চায় কল্পনার মামলাটি আবার সামনে আসুক বা জাগ্রত হোক সেটা হতে পারে। কিন্তু মামলাটি আবার জীবিত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয়তাবাদের রাজনীতি আছে, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আদিবাসী ইস্যুকে কতটুকু সামনে নিয়ে আসবো, নারী বিষয়টিকে নারী ইস্যুর বাইরে কতটুকু সামনে নিয়ে আসবো, হিলটেক্সের ইস্যুগুলোকে কতটুকু সামনে নিয়ে আসবো- এবং সেইসঙ্গে আপনারা জানেন, হিলটেক্সের রাজনীতি একটু জটিল। সেই জায়গা থেকে বিচার করলে কল্পনা চাকমা অপহরণের মামলার বিচারের দাবি সামনে নিয়ে আসা বা এর পরিপ্রেক্ষিতে গণজোয়ার তৈরি হওয়া সহজ নয়।
স্বরলিপি: কল্পনা চাকমার সঙ্গে আপনার বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল কীভাবে?
জোবাইদা নাসরীন: আমি যখন কলেজে পড়ি তখন ‘পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ’ অভয়গ্রস্ত ছিল। শান্তিচুক্তির আগের ঘটনা সেটি। ১৯৯২ সালে আমি বদরুন্নেসা কলেজে এইচএসসি ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি, আমার এক রুমমেট ছিলেন মারমা একটি মেয়ে। একদিন জানতে পারলাম মেয়েটির খুব মন খারাপ, কারণ পাহাড়ে হত্যাকাণ্ড হয়েছে। তখন কিন্তু পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ এখনকার মতো এতো সামনা-সামনি রাজপথে মিছিল করতে পারতো না। অনেকটাই আন্ডারগ্রাউণ্ড দল ছিল। আপনারা জানেন, পাহাড় একটা সময় পুরোটাই সেনা নিয়ন্ত্রিত ছিল এবং যে কোনো সংবাদ বা ঘটনা কিন্তু সহজেই মানুষজন জানতে পারতো না। আমি মারমা বন্ধুর সঙ্গে মধুর ক্যান্টিনে প্রথম যাই প্রতিবাদ সমাবেশে। তখন কল্পনাকে দেখতে পাই। জানতে পারি সেও আমার ব্যাচে এসএসসি পাস করেছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে সে হিল উইমেন ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে আছে। তখন তার সঙ্গে আমার টুকটাক কথা হয়। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সমাবেশে বা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদে আমি যেতাম; কল্পনার সঙ্গে দেখা হতো। আমরা দুজন দুজনকে চিঠি লিখতাম। কল্পনাদের বাড়ি আসলে অনেক দূরে ছিল, তখন দূরে এই অর্থে রাস্তাঘাট অতোটা ভালো ছিল না। দুর্গম এলাকা ছিল, যেখানে সহজেই বাসে যাওয়া যেত না, অনেকটা পথ ঘুরে বাসে কিছুটা পথ, কিছুটা পথ নৌকায় এরকম করে যাওয়া যেত। সর্বশেষ কল্পনা অপহরণের মাসেই জুনের প্রথম সপ্তাহে সে ইপিজেডে পরীক্ষা দিতে সাভার আসে। আমি তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। কল্পনা আমার রুমে আসে এবং বলে- পরীক্ষা দিতে এসেছে। জুনের চার তারিখেই কল্পনা বাড়ি ফিরে যায়, সেদিনই কল্পনার সঙ্গে আমার শেষ দেখা। তখন কলাবাগানে ডলফিন একটা বাসস্টপেজ ছিল, ওখানে কল্পনাকে পৌঁছে দেই। তার এক সপ্তাহ পরেই কল্পনা অপহরণের শিকার হয়।
স্বরলিপি: অপহরণের খবর জানতে পারলেন কবে- কীভাবে?
জোবাইদা নাসরীন: কল্পনার সঙ্গে আমার ওর বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। সেদিন আমি যাইনি। জুনের সাত তারিখ বান্দরবান যাই। ১২ জুন ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন। তখন জাহাঙ্গীরনগরে প্রথম ভোট দেবো খুব উত্তেজিত ছিলাম। এরপর ১৩ তারিখ বিকেলবেলা পাহাড়ের আদিবাসী এক ছেলের কাছে জানতে পাই কল্পনাকে অপহরণ করা হয়েছে।---
স্বরলিপি: নোবেলজয়ী রেড ইণ্ডিয়ান এক নারী ‘রেগোবার্তা মেনচু’র কথা আমরা জানি, যার মাকে অপহরণ করা হয়েছিল এবং বাবাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল। রেগোবার্তা মেনচু পালিয়ে বেঁচেছিলেন। এই যে পাহাড়ে অপহরণের ঘটনা-হত্যাকাণ্ড এর পেছনে মূল কী কারণ থাকতে পারে?
জোবাইদা নাসরীন: মানুষের ভায়োলেন্স মেমোরি মানুষকে তার পরিচিতি নির্মাণে সহায়তা করে। দেখুন কল্পনা অপহরণ ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য অত্যন্ত কষ্টের ঘটনা। এই ঘটনা আমার মানসিক মতাদর্শে, জীবন যাপনে একটা বড় ধরনের ঝাঁকি তৈরি করেছিল। যে কারণে কল্পনার লড়াই, কল্পনার ডায়েরিগুলো যদি আপনি দেখেন সেখানে আপনি দেখবেন- কল্পনার লড়াই কিন্তু অনেকভাবে। কল্পনা শুধুমাত্র পাহাড়ের বিষয়ে কথা বলতো না, নিজ সমাজে পুরুষতন্ত্রের যে অলিগলি সেগুলো নিয়েও কল্পনা প্রশ্ন তুলেছেন। কল্পনা অপহরণের পরে হিলটেক্স বিষয়ে অনেকগুলো গবেষণার কাজ করি এবং আমার পিএইচডি ছিল পার্বত্য অঞ্চলের ভায়োলেন্স নিয়ে। এই বিষয় নির্ধারণের বড় প্রভাব হিসেবে কাজ করেছে আমার বন্ধু কল্পনা। যে আমাকে পাহাড় চিনতে সহায়তা করেছে, যে আমাকে পাহাড়ের বিষয়ে আমার রাজনৈতিক বিষয়ের যে চিন্তাভাবনা সেটা গঠন করেছে। আমার গবেষণা থিসিসে দেখিয়েছি যে, পাহাড়ে যে গণহত্যা (শান্তিচুক্তির আগে) সেই গণহত্যার শিকার নারী-পুরুষ তারা বাড়িঘর ছেড়ে চলে গেলেন। ভারতের ত্রিপুরার ক্যাম্পে তারা ১২-১৪ বছর ছিলেন। এবং ফিরে এসেছেন শান্তিচুক্তির পর। আমার গবেষণার কাজটি আসলে এই যে, মানুষের ভায়োলেন্স মেমোরি মানুষকে তার পরিচিতি নির্মাণে কীভাবে সহযোগিতা করেছে। পাহাড়ে এক সময় ইলেক্ট্রিসিটি ছিল না, যদিও কাপ্তাই ড্যামের কারণে এক লাখ পাহাড়িকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। কাপ্তাই ড্যাম, চন্দ্রঘোনা বিদ্যুৎ- হাইড্রোইলেক্ট্রিক কল চালু হলো- সবচেয়ে মজার বিষয়, এখন পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে সব জায়গায় বিদ্যুৎ যায়নি। গড়ে ৪৭ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ কাভার হয়েছে। যে পার্বত্য অঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হলো সেখানে কিন্তু বিদ্যুৎ মেলেনি। এখনো শোনা যায়, জীপের আলো দেখলে তারা ভয় বোধ করে, এই আলো তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় ত্রিশ বছর আগের স্মৃতিতে- ভায়োলেন্স মেমোরির ক্ষেত্রে এটা হয়। বিশেষ করে আমি সেইসব নারীদের কয়েকজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম যারা তাদের সন্তানদের পাহাড়ের উপর থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন। ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে তারা পালিয়ে যাচ্ছিলেন। বাচ্চা কাঁদলে মিলিটারিরা আসবে, তাদের গুলি করবে, সেই ভয়ে আশেপাশের মানুষ বলেছে-এই বাচ্চা ফেলে দাও। মায়েরা পাহাড় থেকে তাদের বাচ্চা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন। ভায়োলেন্স মেমোরির ক্ষেত্রে আমি জবানবন্দিগুলো যখন রেকর্ড করেছি তখন আমার কাছে ঘুরে ফিরে কল্পনা এসেছে!
স্বরলিপি: ভায়োলেন্স মেমোরির কথা এলে ভূমি মালিকানার বিষয়টিও সামনে আসে। ২০০১ সালে যে ভূমি কমিশন আইন সংশোধন হওয়ার কথা ছিল তা এখনো অমীমাংসিত?
জোবাইদা নাসরীন : ভূমি কমিশনে এখন পর্যন্ত একটা মিটিং হয়েছে। কমিশনের পদাধিকার যাদের দেয়া হয়, সাধারণত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। তারা অনেক সময় যেতে চান না, মিটিং করতে চান না, তাদের বিভিন্ন সমস্যা থাকে। দেখা যাচ্ছে মিটিং হচ্ছে কিন্তু আঞ্চলিক নেতারা জানেন না। তারচেয়ে বড় কথা যে, আন্তঃরাজনীতি যেগুলোকে আমরা বলি সেগুলোর কারণে ভূমি কমিশন কর্যকর হয়ে ওঠেনি। মূল দাবি- পাহাড়িরা তাদের হারানো জমি ফেরত পেতে চায়। এবং সেটা প্রথাগত আইনের মাধ্যমে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা তা নিশ্চিত করতে পারিনি। পাহাড়ে এখন অনেক জমির মালিক শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী। এই পরিস্থিতিতে ওই এলাকা থেকে মানুষজন চলে যাচ্ছে। সব কিছু আলাপচারিতায় আসে না, সেগুলো ডকুমেন্টেড না।
স্বরলিপি: বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যায়, সরকারের উন্নয়নমূলক কোনো কাজ বা কর্মসূচিতে পাহাড়িরা বিশ্বাস করতে চায় না বা সরকারের পদক্ষেপকে অবিশ্বাস ও সংশয়ের দৃষ্টিতে দেখে থাকে।
জোবাইদা নাসরীন: অনেকগুলো বিষয় আছে, যেমন পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক উন্নয়ন করা হয়েছে। রাস্তাঘাট, আবার যৌথ খামার এগুলো করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, স্থানীয় লোকজন বা আদিবাসীদের উন্নয়ন চিন্তাকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি। ছোট একটি উদাহরণ দিলে বুঝতে আরো সহজ হবে, আমি একটি গবেষণার কাজ করেছিলাম- বান্দরবানে। সেটা ছিল খুমি আদিবাসীদের সঙ্গে। সেখানকার রাস্তাঘাট অত্যন্ত দুর্গম। আমি পাহাড় ডিঙ্গিয়ে গিয়েছিলাম। প্রায় দশ ঘণ্টা লাগে ওখানে যেতে, তো ওখানে গিয়ে আমি ওদের বললাম- এতো পাহাড় টপকে আসতে হয় কেন? তোমরা রাস্তা চাও না? তখন তারা বললো, তারা রাস্তা চায় না। তারা এভাবেই থাকতে চায়। কারণ রাস্তা থাকা মানেই তার জীবন যাপনে অন্যের হস্তক্ষেপ হবে। এই দেখুন, উন্নয়নের ধারণাগুলোতে কত পার্থক্য!
স্বরলিপি: পাহাড়ের জনবসতিতে এখন বাঙালি ৪৮ শতাংশের বেশি।
জোবাইদা নাসরীন: এখানে আমি আর একটি কথাও বলতে চাই, বাঙালি কিন্তু এখানে নানাভাবে চিহ্নিত। আদি বাঙালি যারা ওখানে ১৯৪৭ সালের আগে থেকেই আছেন তারপর সেটেলার বাঙালি আছেন। যারা বসতি স্থাপন কর্মসূচীর আওতায় গিয়েছেন। আবার নয়া বাঙালি আছেন যারা ব্যবসা বাণিজ্যের সূত্রে ওখানে বসতি স্থাপন করেছেন। পানিশমেন্ট ট্রান্সফার বলে বাঙালি সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা দুর্নীতি করেছেন তাদের ওখানে পাঠানো হয়, আর ওই জোনটাকে বলা হয় ‘পানিশমেন্ট জোন’। এটা কিন্তু ব্রিটিশ কলোনিয়াল মানসিকতা। স্থানীয় পরিষদের মেম্বার এর বিরোধিতা করে বলেছেন, বাঙালি দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের ওখানে ট্রান্সফার করতে দেব না। চাকরি সূত্রে খারাপ লোকজন ওখানে যাবে তা হতে পারে না। তারা প্রশ্ন তুলেছে, কেন এই জোন শাস্তিমূলক জোন হিসেবে চিহ্নিত হবে?
স্বরলিপি: পাহাড়ের সমস্যা সমাধানে পার্বত্য শান্তিচুক্তি হলো। কিন্তু এই চুক্তির বিরোধিতা করেছিল স্থানীয় রাজনৈতিক দল ইউপিডিএস। স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলো কি একত্রিত থাকতে ব্যর্থ হয়েছিল?
জোবাইদা নাসরীন: শান্তিচুক্তিকে কেন্দ্র করে আবির্ভূত হয়েছিল ইউপিডিএস। লক্ষ্য করলে দেখবেন যে, ২০০৭-এর পরে কেয়ারটেকার গভমেন্ট বিভিন্ন জায়গায় সংস্কারের ধারা চালু করার চেষ্টা করেছিল। সেই সংস্কারের ছোঁয়া কিন্তু আঞ্চলিক দলগুলোতেও লাগে। বিভিন্ন দল ভাঙ্গে, ইউপিডিএসও ভাঙ্গে। ফলে প্রত্যেকে প্রত্যেকের প্রতি একটা সত্য-মিথ্যা মনোভাব তৈরি হয়। ইউপিডিএস দলের লোকগুলো কিন্তু এখন আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সঙ্গে জড়িত। আবার হিলটেক্সে বাঙালিদের একটা দল আছে। ওখানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হলে কিন্তু আবার আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত সব এক হয়ে যায়। মানে আদিবাসীদের বিপক্ষে চলে যায়।
স্বরলিপি: স্বাধীন বাংলাদেশে পাহাড়ে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ কীভাবে হলো?
জোবাইদা নাসরীন: মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ১৯৭২ সালে সংবিধানে বাঙালি বলে যে পরিচয় দেয়া হয়েছে সেটির বিরোধিতা করেন। সেই বিরোধিতার সূত্র ধরেই পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। পরবর্তী সময়ে যখন তারা স্বায়ত্তশাসন দাবি করে তখন সরকার এটিকে জাতীয়তাবাদী থ্রেট হিসেবে গণ্য করে। সরকার ওই অঞ্চলে সেনা ফোরাম তৈরি করে, এলাকাটি মিলিটারি কন্ট্রোলে চলে যায়। সেই মিলিটারি কন্ট্রোলের প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি উইংস শান্তিবাহিনী আত্মপ্রকাশ করে। তারপর থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়।
স্বরলিপি: পাহাড়ের ভবিষৎ রাজনীতি কেমন হতে পারে বলে আপনার মনে হয়?
জোবাইদা নাসরীন: একটা বিষয় খুব স্পষ্ট- সরকার কিন্তু চায় না আঞ্চলিক দলগুলো একত্রিত হোক। তারা যদি নিজেরা নিজেরা যুদ্ধ করে সরকারের লাভ। সরকার বলতে পারবে- আমাদের কিছু করার নেই। তারা নিজেরা নিজেরাই যুদ্ধ করছে। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া, পাহাড় থেকে পুরোপুরিভাবে সেনাবাহিনী withdraw না হওয়া, ভূমি কমিশন কাজ না করা- সবকিছু মিলিয়ে পাহাড়ের ভবিষৎ যে খুব ভালো এটা বলা কঠিন। পাহাড়িদের মধ্যে সুবিধাবাদি শ্রেণি তৈরি হওয়া, সেগুলোও কিন্তু আছে। সূত্র : mruindigenous.blogspot.com





ছবিঘর এর আরও খবর

ক্ষমতার পিছনে জনসম্মতি না থাকলে তা ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে পারে ক্ষমতার পিছনে জনসম্মতি না থাকলে তা ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে পারে
রাঙামাটিতে আবু বক্কর সিদ্দিক এর বিরোদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে জনসাধারণ রাঙামাটিতে আবু বক্কর সিদ্দিক এর বিরোদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে জনসাধারণ
প্রয়াত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এপোলো জামালীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন প্রয়াত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এপোলো জামালীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন
বিজয়ানন্দ থেরো’র ৪১তম জন্মদিন উদযাপন বিজয়ানন্দ থেরো’র ৪১তম জন্মদিন উদযাপন
দেশের  নিরাপত্তার সাথে যুক্ত প্রধান সমুদ্র বন্দর  বিদেশী কোম্পানির তত্বাবধানে দেয়ার তৎপরতা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী দেশের নিরাপত্তার সাথে যুক্ত প্রধান সমুদ্র বন্দর বিদেশী কোম্পানির তত্বাবধানে দেয়ার তৎপরতা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী
রাঙামাটিতে বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন রাঙামাটিতে বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ চলে যাওয়ার দায়দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারকেই বহন করতে হবে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ চলে যাওয়ার দায়দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারকেই বহন করতে হবে
গণঅভ্যুত্থানের অর্জন ধরে রাখতে যুবসমাজকে রাজপথে জেগে থাকতে হবে গণঅভ্যুত্থানের অর্জন ধরে রাখতে যুবসমাজকে রাজপথে জেগে থাকতে হবে
ভারত - পাকিস্তানের মধ্যকার এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কেউই বিজয়ী হবেনা ভারত - পাকিস্তানের মধ্যকার এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কেউই বিজয়ী হবেনা
মৌলবাদীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে নারী প্রতিকৃতিতে জুতা মেরে বস্ত্র হরণ করে সমগ্র নারী সমাজকে অসম্মান করেছে : জুঁই চাকমা মৌলবাদীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে নারী প্রতিকৃতিতে জুতা মেরে বস্ত্র হরণ করে সমগ্র নারী সমাজকে অসম্মান করেছে : জুঁই চাকমা

আর্কাইভ